Sagardighi Secchasebi Saghathan

২০১৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে সাগরদীঘি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেইসময় সংস্থাটির কোনো নাম ছিলো না। ২০১৮ সালে সাগরদীঘি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নাম স্থাপিত হয়। এই সংগঠনের মুল উদ্যোক্তা আর.জে. ইসলাম ওরফে বিট্টু সরকার।
Our Mission & Vision :
সমাজের অধঃপতন ও বিপদের সময় দেখা যায়, আমরা কত শ্রেণির মানুষ একটা সমাজকে নিয়ে ভাবি। একটি ভঙ্গুর সমাজকে টেনে তুলতে কতগুলো মানুষের চিন্তা, কর্ম, আর সহযোগিতা প্রয়োজন হয়? স্বাভাবিকভাবে দেখলে মনে হবে, আমাদের চলার পথে সমাজের কোন অবদান নেই।
কিন্তু মূল বিষয় হলো, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে সমাজ ও সামাজিক প্রক্রিয়ার নানা অবদান। উদহরণসরূপ বলা যায়, যখন আমাদের সমাজে কোন বিপর্যয় নেমে আসে বিশেষ করে মহামারি, অগ্নিকান্ড বা খরা, বন্যা জলোচ্ছ্বাসের মত কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তখন আমাদের চারপাশ থেকে সহযোগিতার অসংখ্য হাত বেরিয়ে যায় নানা সংগঠনের নামে। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তাদের কাজ করতে দেখা যায়।
চীনা দার্শনিক কনফুশিয়াস এর একটি মহামূল্যবান উক্তি দিয়েই লেখা শুরু করছি। “He who wished to secure the good of others, has already secured his own.” অর্থাৎ যে ব্যক্তি অন্যের কল্যাণের ইচ্ছা পোষণ করে সে প্রকৃত প্রক্ষে নিজের কল্যাণই নিশ্চিত করে। সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রেরণা পাওয়া যায়। সামাজিক সংগঠনগুলোতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইতিবাচক গুণাবলী তৈরী হয়। মানুষের মধ্যে নেতৃত্ব-গুণ তৈরী হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ে। একজন সামাজিক সংগঠনের কর্মী গান আবৃত্তি কিছু যদি নাও জানে তবুও তিনি একজন সংগঠন না করা মানুষের চেয়ে আলাদা। প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের মৌলিক বিষয় একই। সামাজিক সংগঠন সবার মতকে শ্রদ্ধা করা, সদস্য হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করা, নিজেকে বিকশিত করা, একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হওয়া সহনশীল হওয়া, ইত্যাদি শেখায়। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতেও শিক্ষা দেয় সামাজিক সংগঠন।
এখন মানুষ মানুষে যে অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা সামাজিক অবক্ষয় দেখা যায় এগুলো দূর করতে হলে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ প্রয়োজন। সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক সুস্থতা আনা সম্ভব। নিজেকে একজন চৌকস মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একজন উদার মানুষ হতে হলে লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করতে হবে। “আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে, কর্মী হওয়ার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে”। সেজন্য শিক্ষার্থীদের সমাজ সেবামূলক সংগঠন করতে হবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে শুধু পরীক্ষায় ভাল ফল করলেই হয়না। সফল মানুষ হতে হলে নানা দিক থেকে চৌকস হতে হয়।
ইংরেজীতে একটি কথা আছে “A man who builds walls instead of bridge has no right to complain if he is alone” অর্থাৎ কেউ যদি সেতুর বদলে প্রাচীর রচনা করে নিঃসঙ্গ হলে অভিযোগ করার অধিকারটিও সে হারায়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র মতে মানুষের মধ্যে রজঃ গুন রয়েছে তমঃ গুন ও রয়েছে। রজঃ গুণ হলো সৎকর্ম। সবধর্মই সৎকর্মকে মানুষের সর্বোচ্চ গুণ হিসেবে বিবেচনা করে। সামাজিক সংগঠন যুক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায়। মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের বিকাশ ঘটানো যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই। সেজন্যই বন্ধুকে চাই।”
এরিস্টটল বলেছিলেন “Pleasure in the job put perfection in the work”. সংগঠন মানুষের নেতিবাচকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে সহযোগিতা করে, হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে বেড়িয়ে আসতেও মানুষকে সাহায্য করে। চলার পথে একে অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরী করে। জীবনের প্রতি মুহূর্তকে উপভোগ করার পরিস্থিতি ও তৈরী করে দেয় সংগঠন। সমাজ জীবনে সকল অবক্ষয় সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
পরিশেষে বলা যায়, একটি সামাজিক সংগঠনকে সফল করতে হলে নেতাদের নেতৃত্বগুণ, দক্ষতা, ধৈর্য্য, স্বেচ্ছাসেবী মানসিকতা, সহযোগিতা-পরায়ন, দলগত সিদ্ধান্তের উপর শ্রদ্ধাশীল মনোভাব, সর্বোপরি নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। সংগঠন হলো এক সুতোয় এক এক করে এক একটা ফুল দিয়ে গাঁথা মালার মতো।